অবিশ্বাস্য ঐতিহ্য মেঘনার ইলিশ মাছ ও মহিষের দুধের টক দই
![]() |
চিত্রঃ মেঘনার ইলিশ মাছ ও মহিষের দুধের টক দই |
মেঘনার ইলিশ মাছ ও মহিষের দুধের টক দই ভোলা জেলা বাংলাদেশের অন্যতম একটি ঐতিহ্য। ভোলা জেলার পুরানো নাম হলো শাহবাজপুর। বাংলাদেশের বৃহত্তর একটি দ্বিপ জেলা হলো ভোলা। ভোলার চারপাশে ঘিরে আছে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী। ভোলার মূল ভূ-খন্ডকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বহু স্থাপনা।
বাংলার ঐতিহ্য মেঘনার রূপালি ইলিশ মাছ ও মহিষের দুধের টক দই।
ভোলা জেলায় প্রায় বিশ হাজারের মত ঝেলে পরিবার আছে যারা কোনা না কোনো ক্ষেত্রে মাছের সাথে জড়িত। ভোলা জেলার চারপাশে মেঘনা নদী থাকায় এখনে মাছ খুব বেশি পাওয়া যায় বিশেষ করে দক্ষিনের বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর ইলিশ মাছ আসে।
![]() |
চিত্রঃ মেঘনার ইলিশ মাছ |
মেঘনার রুপালি তাজা ইলিশ মাছ
ভোলা জেলার ভোলা সদরের একটি ইউনিয়ন শিবপুর। শিবপুর ইউনিয়ন ঘিরে গড়ে উঠেছে অনেক জনপদ বিশেষ করে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ছোয়া একটু বেশিই লেগেছে হয়তো।
ভোলার খাল মাছ ঘাটে দিনে দুইবার মাছ বেচাকেনা চলে। বিশেষ করে নদীর জোয়ার ভাটার ওপর ভিত্তি করে এই মাছের বেচাকেনা চলে। ভোলার খাল ঘিরে গড়ে উঠেছে অনেক বসতি যা বেশিরভাগ মানুষ মাৎস্য আহরোণ করে জীবিকা নির্বাহ করে।
এখানে রয়েছে ৪/৫ হাজার মানুষ যার ৯৫% মৎস্য কাজে জরিত। ভোলার খুব জনপ্রিয় মাছ ঘাট হওয়ায় এখানকার অনেক সুনাম রয়েছে। এখান থেকে দৈনিক লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ বিভিন্ন বিভাগীয় শহর সহ ঢাকায় যায়।
ভোলার খাল মাছ ঘাটে পাওয়া যায় সব রকমের মাছ বিশেষ করে সাগরের মাছ খুব বেশ পাওয়া যায়৷ ইলিশের মৌসুমে এখানে ইদের মত আনন্দ থাকে কারণ তখন প্রচুর পরিমানে ইলিশ মাছ ধরা হয়। নদীতে প্রচুর মাছ পড়ার করাণে এখানকার ঝেলে সহ এই ব্যবসায় জরিত সকলের মুখে খুশির সিমা থাকে না।
ইলিশ মাছের মৌসুমে এখান থেকে লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ বিভিন্ন জায়গায় যায়। ভোলার যত মাছ ঘাট রয়েছে সবচেয়ে বেশি মাছ এই ঘাটের পাওয়া যায়। তাছাড়া পোয়া মাছ, চিংড়ি মাছ, চেওয়া মাছ, বিভিন মাছ সহ নদীর যত মাছ আছে সবই এই ঘাটে পাওয় যায়। এখানকার ঝেলেদের
জীবনযাপন খুবই সাধারণ তারা কেউ অনেক টাকার মালিক না। তারা মাছের আড়ৎদারের কাছ থেকে টাকা লোন নিয়ে নৌকা কিনে জাল কিনে তার পর মাছ ধরে। যার কাছ থেকে টাকা লোন নেয়া হয় তার মাধ্যমে মাছ বিক্রি করতে হয় এবং ধার আস্তে আস্তে পরিশোধ করতে হয়।
ভোলার খাল মাছের ঘাটে সকল প্রকার মাছই পাওয়া যায় তবে মাছের ভরা মৌসুমে অনেক মাছ পাওয়া যায়। এই মাছের ঘাট একদিন ও বন্ধ থাকে না এখানে প্রতিদিনই মাছ বিক্রি চলে। ভোলা সদরের সকল বেপারিরা এখান থেকে মাছ পাইকারী কিনে বিভিন্ন যায়গায় বিক্রি করে।
এই মাছ ঘাটের প্রথম বেচাকেনা শুরু হয় সকাল ভোরে কারণ ঝেলেরা সারা রাত মাছ ধরে সকালে ঘাটে নিয়ে আসে। সকাল বেলা এই ঘাটে অনেক রকমের মাছ পায়া যায় যা পাইকারী বিক্রি হয়। তাছাড়া আশেপাশের অনেক পরিবার বেশি মাছ কিনলে তাদের কাছে চলে যান।
ভোলার খালে খুবই কম মূল্য সকল প্রকার নদীর মাছ পাওয়া যায়। এখানে খুচরা বিক্রি হয় না সুতরাং যারা বেশি মাছ কিনে তারাই এখানে আসে। এখানে বড় বড় কয়েকজন আড়ৎদার রযেছে যারা প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ ঢাকায় পাঠায়।
প্রতিদিন এখান থেকে গড়ে ২০/৩০ লক্ষ টাকার মাছ বিক্রি হয় তাছাড়া মাছের ভরা মৌসুমে ৭০/৮০ লক্ষ টাকার মাছ বিক্রি হয়ে থাকে। আপনি যদি মেঘনার তাজা ইলিশ মাছ দেখতে চান তাহলে ভোলার খাল মাছ ঘাটে আসতে হবে কারণ এখানকার কোন মাছ ফ্রিজের হয় না।
প্রতিদিন যেই মাছ ধরা হয় সেগুলো এখানেি বিক্রি করা হয় তাই তাজা মাছ কেমন তা এখানে আসলে বুঝা যায়। ভোলার ঘাটে কয়েকজন আড়তদার রয়েছে যেমন সেলিম দালাল, হারুন দালাল, মুন্না, সাইদ, মাইনউদ্দীন মেম্বার সহ অনেক আড়ৎদার রয়েছে যাদের কাছে খুব স্বল্প মূল্যে পাইকারি মাছ পাওয়া যায়।
![]() |
চিত্রঃ মহিষের টক দই |
মহিষের দুধের টক দই
বাংলার বৃহত্তর জনবহুল একটি জেলা হলো ভোলা। এই জেলায় এক সময় অনেক অনুন্নত ছিল কিন্তু বর্তমান সময়ে অনেকটা আধুনিক হয়ে উঠেছে। ভোলা জেলায় আধুনিক টেকনোলজির ছোয়া লাগলেও ভোলার ঐতিহ্য এক ই আছে।
বাসায় অথিতি আসলে খাওয়ার পরে দই না দিলে যেনো তাদের সঠিক আপ্যায়নই হয় না। ভোলার ঐতিহ্য যা বহু কাল ধরেই চলে আসছে। এক সময় এই প্রচলন শুরু হয়ে বর্তমানে তা ঐতিহ্যতে রুপ নিয়েছে।
একসময় ভোলা জেলা চর ছিলো যার ফলে অনেক মানুষই মহিষ গরু চড়াতো। তখন থেকেই মহিষের দুধ থেকে টক দইয়ের প্রচলন শুরু হয়ে যায়। অথিতি আপ্যায়ন, বিয়ে, জন্মদিন যেনো টক দই ছাড়া অচল। বাংলাদেশের কোথাও এই দই তৈরী করা হয় না তাই এটি ভোলার ঐতিহ্য বলা চলে।
ভোলার ঐতিহ্য মহিষের দুধের টক দই কোথায় পাবেন।
ভোলার চারপাশে নদী থাকায় এই জেলার মানুষ প্রচুর পরিমানে মহিষ পালন করে। ভোলা জেলায় বিভিন্ন যায়গায় প্রচুর মহিষের বাথান রয়েছে যেখান থেকে এই দুধ আসে। তাছাড়া দুধের পরিমান বেশি হওয়ায় দই সহ দুধের তৈরী অনেক খাবারই পাওয় যায়।
আপনি গরুর দুধ খেয়েছে কিন্তু কখনো কি মহিষের দুধ খেয়ে দেখেছেন। মহিষের দুধ কাঁচা বা জাল দিয়ে খাওয়া হয় না কারণ মহিষের দুধ একটু গরম থাকে তাই বেশি একটা খায় না কেউ। তাই মহিষের দুধ দিয়ে দই মিষ্টির প্রচলন টাই বেশি।
![]() |
চিত্রঃ মহিষের টক দই |
ভোলা জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে দই পাওয়া যায় কিন্তু সবার দই ভালো হয় না কারণ দই তৈরী করাটাও একটি ক্রিয়েটিভ কাজ। যেমন ভোলা জেলার শান্তিরহাট বাজার যেখানে আপনি ১০০% খাটি মহিষের দই পাবেন।
ভোলা সদর থেকে সরাসরি শান্তিরহাট যাওয়ার রাস্তা রয়েছে আপনি খাটি মহিষের দই খেতে চাইলে চলে যেতে পারেন সেখানে। শান্তির হাট বাজারে কয়েকটি দোকান রয়েছে যাদের মহিষের দই খুবই সেরা।
বাংলাদেশের বিভন্ন আনাচে কানাচে তাদের দই নেয়া হয়। শান্তিরহাট বাজারের দইয়ের দুধ আসে মাঝেরচর নামক যায়গা থেকে। মাঝের চর হলো নোয়াখালী এবং ভোলা জেলার মাঝামাঝি একটি চর যেখানে হাজার হাজর মহিষের বাথান রয়েছে।
টক দইয়ের প্রধান কাঁচা মাল মহিষের দুধ এইরকম চর থেকেই আসে। প্রতিদিন দুপুরে আসে মহিষের দুধ যেটা আসামাত্রই বসানো হয় হাড়িতে।
শান্তির হাট ছাড়াও বহু দইয়ের দোকান রয়েছে যেখানে আপনি টক দই পাবেন। আমার দেখা মতে শান্তিরহাট বাজারের দইটা সেরা মনে হয়েছে কারণ এখানের দইযে কোনো ভেজাল নেই যা আপনি দই টেষ্ট করলে আলাদা স্বাদ নিয়ে বুঝতে পারবেন। এখানে ১৫০/২০০/২৫০/৩০০ টাকা দিয়ে বিভিন্ন সাইজের হাড়ি দই কিনতে পারবেন।
তাছাড়া আপনি আসলে এখানে চিরা দই পেয়ে যাবেন যা পেট ঠান্ডা করার জন্য বেস্ট খাবার। শান্তির হাট ছাড়াও বিভিন্ন জায়গা যেমন গুইংগার হাট, যুগিরঘোল, ভোলা সদর রোড, চৌমুহনী, তুলাতুলি, ব্যাংকের হাট, ভেলুমিয়া, খেয়াঘাট সহ বেশ কিছু যায়গায় খাটি দই পাওয়া যায়।
মহিষের টক দই শরীরের জন্য খুব ভালো কারণ এটি খুব তারাতাড়ি হজম শক্তি বাড়ায়। ভোলার পুরানো এই ঐতিহ্য এখনো চলছে তাই এর চাহিদাও খুব বেশি। তাছাড়া এই টকদই দিয়ে তৈরী হয মাখন-ঘোল যার জনপ্রিয়তা খুবি ভালো।