Skip to content Skip to sidebar Skip to footer

শ্রেষ্ঠ পর্যটন হটস্পট তারুয়া সমুদ্র সৈকতে ভ্রমন

  

শ্রেষ্ঠ পর্যটন স্পট তারুয়া সমুদ্র সৈকতে ভ্রমন
চিত্রঃ তারুয়া সমুদ্র সৈকত

তারুয়া সমুদ্র সৈকত ভ্রমন- বাংলার পর্যটন স্পট

তারুয়া সমুদ্র সৈকত ও চর কুকরি মুকরি এ যেনো অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। আগের পোষ্টে আমরা চর কুকরি মুকরি এবং তারুয়া সমুদ্র সৈকত সম্পর্কে ধারনা দেয়ার চেষ্টা করেছি।


আজকে আপনাদের বলবো কিভাবে তারুয়াসমুদ্র সৈকত এবং চর কুকরি মুকরি খুব সহজে ঘুরতে পারবেন। কিছু দিন আগে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ঘুরে আসলাম তারুয়া সমুদ্র সৈকত থেকে আজকে তার গল্পই শুনাবো আপনাদের। 



তারুয়া সমুদ্র সৈকত এবং চর কুকরি মুকরি যেতে কেমন খরচ হবে কিভাবে যাবেন সকল কিছুর ধারনা পেয়ে যাবেন পোষ্টটি পরলে। 

আরো পড়ুনঃ


2. বাংলাদেশের শীর্ষ দুটি পর্যটন স্পট।


তারুয়া সমুদ্র সৈকত ও চর কুকরি মুকরি ভ্রমন গাইড লাইন

আমাদের সকলের বাসা ভোলা সদরেই ছিলো। আমরা সকাল ভোর সাতটায় রওনা দেই প্রথমে পি টি আইর সামনে সবাই নাস্তা করি তার পর গন্তব্য চরফ্যাশনের উদ্দেশ্য বের হই। 


নাস্তা করতে করতে যাদের গাড়ির তেল প্রয়োজন তারা তেল নিয়ে নেয়। সকাল ৮.৩০ মিনিটের দিকে আমরা বোরহানউদ্দিন থানায় পৌঁছাই এবং সেখানে কিছুক্ষণের জন্য যাত্রা বিরতি দেয়া হয়।  


সেখান থেকে আমরা হালকা চা নাস্তা সেরে সোজা চরফ্যাশনের উদ্দেশ্যে যায়। পথিমধ্যে ২/৩ বার দাড়িয়েছি আমরা কিছুক্ষন দুষ্টামি বা খুনসুটি করে আবার বাইক চালাতাম। চরফ্যাশন পৌঁছাতে আমাদের বেলা ১১ টার মত বেজে যায় সেখান থেকে আমরা সোজা দক্ষিণ আইচা থানার কচ্ছপিয়া ঘাটের দিকে যাই।  


আপনারা যদি বাসে যেতে চান তাহলে ভোলা বাসস্ট্যান্ডে থেকে সোজা দক্ষিন আইচার বাস পেয়ে যাবেন।  দক্ষিন আইচা বাসস্ট্যান্ড থেকে কচ্ছপিয়া ঘাট খুব একটা বেশি দূর না। 


আমরা কচ্ছপিয়া ঘাটে পৌছানোর পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেই এবং সিদ্ধান্ত নেই ট্রলারে যাবো নাকি স্পিডবোটে যাবো। সকলে সিদ্ধান্ত দিলো সবাই স্পিডবোট দিয়ে যাবে তাই সেটাই ঠিক করা হলো।


 আমাদের বাইকগুলো পাশেই একটি মসজিদের সামনে রাখি যেখানে একটি মাদ্রাসা রয়েছে। অনেকেই সেখানে গাড়ি রাখে এবং সেই মাদ্রাসাতে কিছু টাকা দান করে। 


আপনাদের বলে রাখি আপনার যদি ট্রলারে যেতে চান তাহলে সময় অনেক বেশি যাবে কারন ট্রলারে চর কুকরি তে যেতে ২ ঘন্টার মত লাগে এবং তারুয়াতে গেলে ৩ ঘন্টার মত লাগে। আপনি যদি স্পিডবোট দিয়ে যান তাহলে চর কুকরিতে যেতে ৩০ মিনিট এবং তারুয়া সৈকতে যেতে ৪৫ মিনিটের মত লাগবে।


ট্রলারের ভারা জনপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা যাবে। 


আপনারা যদি চর কুকরি এবং তারুয়া সৈকতে একসাথে ঘুরতে চান তাহলে একটি স্পিডবোট রিজার্ভ করাই ভালো হবে।


 যদি ৬/৮ জন হন তাহলে একটি স্পিডবোট রিজার্ভ করে নিতে পারেন সেক্ষেত্রে ভারা ২/৩ হাজর টাকা পরবে। ওইখানে অনেক স্পিডবোট পেয়ে যাবেন কথা বর্তা বলে যেইটায় সুবিধা হবে সেটা ভাড়া করে নিবেন।


আগেই বলে রাখি তারুয়া সমুদ্র সৈকতে গেলে ওইখানে একদিন থাকবেন না থাকলে সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন না।



আমরা ওইখানে দুইটা স্পিডবোট ভারা করি যেহেতু আমরা ১২ জন ছিলাম তাই দুটি নিতে হয়েছে। আমরা তাদের সাথে ভাড়া করেছি আমাদের চর কুকরি মুকরি ঘুরিয়ে দেখাবে এবং তারপর তারুয়া সমুদ্র সৈকতে নিয়ে যাবে। 


যথারীতি আমরা ১২.৩০ এর দিকে স্পিডবোট দিয়ে চর কুকরির উদ্দেশ্য রওনা দেই। আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো কিছুক্ষণ ঘুরেফিরে তারপর চর কুকরিতে দুপুরের খাবার খেয়ে তারুয়ার উদ্দেশ্য রওনা দিব।


আমরা চর কুকরি মুকরি ঘাটে ১.১৫ মিনিটের দিকে পৌঁছাই এবং সেখান থেকে জুম্মার নামাজ টা সেড়ে নেই। নামাজের শেষে কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি  করি তারপরে পাশেই একটি হোটেলে দুপুরের খাবার খাই। চর কুকরিতে দুপুরে খাবার খেতে জন প্রতি ১০০ টাকার মত খরচ হবে যার ভিতরে মাছ, ডাল, ভাত, ভর্তা থাকবে। আমরা সবাই খাওয়াদাওয়া সেরে কিছুক্ষণ বিস্রাম নেই। 


দুপুর ২টা ৩০ মিনিটের দিকে আমরা মূল গন্তব্য ঢাল চরের তারুয়া সমুদ্র সৈকতের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। যথারীতি চর কুকরি মুকরি ঘাট থেকে আমরা আবার স্পিডবোটে উঠি। বিশাল বড় নদী যার কোনো কুল কিনারা নাই তবে আমাদের কিছুটা ভয় ও লেগেছিল।  


নদীতে দেখা মিলেছে কয়েক প্রজাতির পাখি যারা নদীর মাছ শিকারে ব্যস্ত ছিলো। স্পিডবোটে যেতে যেতে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করলাম সাথে ছিলো বন্ধুদের দুষ্টামি।


বিকাল ৩.৩০ মিনিটের দিকে আমরা তারুয়া সমুদ্র সৌকতের ঘাটে নামলাম। নামার পরে আশেপাশের সৌন্দর্য দেখে সত্যিই মুগ্ধ হয়ে গেলাম। অপরুপ সৌন্দর্য যা ভোলবার মত না। 


তারুয়া সমুদ্র সৈকতের ঘাট খুবই সুন্দর যেহেতু এখানে পানি উঠা নামা করে তাই ঘাট একটু মজবুত ভাবে করা হয়েছে। পাশেই দেখা মিললো হাজার হাজার লাল কাকড়াঁ এবং বিভিন্ন সামুদ্রিক ছোটো ছোটো প্রানী।


আমরা সবাই একটু ক্লান্ত ছিলাম তাই তখন আর দাঁড়ালাম না সোজা আমাদের থাকার স্থানে চলে গেলাম। তারুয়াসমুদ্র সৈকতের পাশে দুটি গেস্ট হাউজ রয়েছে আমরা একটিতে আগে থেকেই বলে রেখেছিলাম।  

হট পোষ্টঃ

1. মেঘনার ইলিশ মাছ ও মহিষের দুধের টক দই বাংলাদেশের প্রধান ঐতিহ্য - ভোলা জেলা।


আমরা চারটি রুম নিলাম যদিও আগে থেকে সব কিছু গুছানো ছিলো তাই সবাই ফ্রেস হয়ে নিলাম। গেস্ট হাউজের সামনে গোল চাল দিয়ে ডিজাইন করা একটি বসার স্থান ছিলো আমরা সকলে সেখানে কিছুক্ষণ বসে বিশ্রাম নিলাম।


বলে দেয়া ভালো তারুয়া সমুদ্র সৈকতে গেলে আগে থেকেই বাজার করে রাখবেন। ওখানে ২/৩ টি চায়ের দোকান রয়েছে কিন্তু কোনো মুদির দোকান নেই তাই যা খাবেন সাথে করে নিয়ে যাবেন। গেস্ট হাউজে রান্না করার লোক রয়েছে তাদের দিলেই তারা রান্না করে দিবে সেক্ষেত্রে কথাবার্তা বলে নিতে হবে।


তাছাড়া তারুয়াসমুদ্র সৈকতে অনেকে ক্যাম্প করে থাকে আপনি চাইলে তাবু টানিয়ে ক্যাম্প করেও থাকতে পারবেন। তবে গেস্ট হাউজে থাকলে ভারা ঠিক করে নিবেন সেখানকার গেস্ট হাউজের ভারা ৪০০/৫০০ টাকা। 


আমরা বিকালের দিকে সবাই একসাথে বেড় হলাম আশেপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। তারুয়া সমুদ্র সৈকতে রয়েছে সাত হাজারের বেশি বড়ই গাছ যেগুলো কেউ করেনি প্রকৃতিক ভাবেই হয়েছে। আমরা কিছুক্ষণ ঘুরেফিরে সোজা চলে গেলাম সমুদ্রের বিচে। বিচের পরিবেশ এতটাই সুন্দর যে না দেখলে বিশ্বাসই হবে না। 


লাল কাঁকড়া গুলো দেখতে খুব বেশি সুন্দর লাগে তবে সাবধানে থাকবেন এগুলো ধরতে যাবেন না। এখানকার লাল কাঁকড়া গুলো খুবই তীক্ষ্ণ এদের কামড়ের ব্যাথা খুব বেশি। 


তারুয়া সমুদ্র সৈকতে বিশ্রাম নেয়ার জন্য অনেকগুলো রেস্ট বেঞ্চ রয়েছে আপনারা চাইলে এখানে বিশ্রাম নিতে পারবেন। এখানকার জনমানুষ খুব কম তাই এখানকার পরিবেশ রক্ষা করা সবার নিজের দায়িত্ব। রেস্ট বেঞ্চে বসে সমুদ্রের ঢেউ উপভোগ করতে পারবেন যা সত্যি খুব অসাধারণ। 



আমরা সন্ধা প্রর্যন্ত সেখানে থাকি এবং সবাই মিলে সৌন্দর্য উপভোগ করি। সন্ধার পরে আমরা আমাদের থাকার স্থানে চলে আসি।  এখানে রাতের বেলা সোলার বিদ্যুৎ প্রধান আলো তাছাড়া জেনারেটর ও রয়েছে যা দিয়ে আপনার যাবতীয় সব ডিভাইস চার্জ করে নিতে পারবেন। সন্ধার পরে সবার ক্ষিধে লাগায় সবাই একসাথে দোকানে যাই এবং সেখানে অনেক্ক্ষণ আড্ডা দেই। 


মজার বিষয় হচ্ছে এখানকার দোকান সারা রাতই খোলা থাকে।  দোকানদার দোকান খোলা রেখেই ঘুমিয়ে পরে কারণ টুরিস্টদের সুবিধার জন্য সারা রাত দোকান খোলা রাখা হয়।

 

এখানকার রাতের পরিবেশ আরো বেশি মধুর সাগরের ঢেউয়ের শব্দ এবং বাতাস মিলিয়ে এ যেনো মধুর পরিবেশ সৃষ্টি করে।  বাংলাদেশে বহু পর্যটন স্পট রয়েছে কিন্তু এত সুন্দর এমন পরিবেশ হয়তো খুব কমই রয়েছে৷ 


আমরা সবাই মিলে গভীর রাত প্রর্যন্ত আড্ডা দেই এবং অনেক মজা করি। রাতে এখানে সাগরের ঢেউ বতাস সাথে বিভিন্ন প্রানীর শব্দ সব মিলিয়ে সুন্দর একটি পরিবেশ।


আমরা পরের দিন দুপুর প্রর্যন্ত সেখানে থাকি তার পরে বাড়ির পথে রওনা করি।  আমাদের রিজার্ভ করা স্পিডবোট সময়মত ঘাটে আমাদের জন্য অপেক্ষা করে। 


এমন রোমাঞ্চকর পরিবেশ সত্যি পাওয়া খুব কষ্টকর।  এখানকার পরিবেশ যে কেউ এসে থাকতে পরবে কারণ এখানের পরিবেশ সম্পুর্ন নিরাপদ।


সুযোগ পেলে আবারো তারুয়া সমুদ্র সৈকতে যাবো সেই প্রকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে। তাই বলা যায় বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ পর্যটন স্পট তারুয়া সমুদ্র সৈকত।