কাগজ থেকে আপেল গাছের চারা তৈরির আশ্চর্যজনক পদ্ধতি
![]() |
চিত্রঃ আপেল গাছের চারা |
টিস্যু পেপার দিয়ে আপেল গাছের চারা তৈরি ভাবতে যতটা কঠিন মনে হচ্ছে বাস্তবায়ন করাটা অনেক সহজ। অনেকেই ভাবতে পারেন টিসু পেপার দিয়ে কিভাবে আপেল গাছের চারা তৈরি করা সম্ভব। টিস্যু পেপার দিয়ে আপেল গাছের চারা তৈরি আধুনিক চাষাবাদ এর একটি অংশ।
বাংলাদেশের মাটিতে এসব ফল খুব বেশি একটা জন্মায় না কারণ এখানকার মাটি এসকল ফলের জন্য অনুপযুক্ত। আধুনিক চাষাবাদ ধারণা নিয়ে খুব সহজে আপেলের চাষ করা সম্ভব। তাছাড়া সঠিক ধারণা থাকলে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা সম্ভব হয়।
আধুনিক চাষাবাদ সম্পর্কিত জ্ঞান থাকলে খুব সহজে টিস্যু পেপার দিয়ে আপেল গাছের চারা তৈরি করতে পারবেন। আপেল বাংলাদেশে অনেক কম উৎপাদন হয় তাই প্রতিবছর বাহিরের দেশ থেকে আমদানি করা হয়।
বাংলাদেশে চাইলে বাণিজ্যিকভাবে আপেলের চাষ করে এখানকার মানুষের চাহিদা মেটানো সম্ভব। এটি অনেক দামি ফল বিধায় এই ফলের চারা অনেক বেশী দামে বিক্রি হয়।
আপেল গাছের চারা তৈরি ও আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি
আপনি যদি বেকার থাকেন তাহলে আপেল গাছের চারা তৈরি করে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করতে পারবেন। আপেল গাছের ভালো ফলন পেতে হলে জানতে হবে আপেল গাছের মাটি কিভাবে প্রস্তুত করতে হয় কিংবা কিভাবে পরিচর্যা করতে হয়।
তাছাড়া আপেল গাছের চাষ লাভজনক সঠিক জ্ঞান ও মন মানসিকতা নিয়ে খুব সহজেই আপনি আপেল গাছের চাষ করতে পারবেন। খুব কম সময়ে কোনরকম ইনভেস্টমেন্ট ছাড়াই আপেল গাছের চারা তৈরি করে প্রচুর অর্থ ইনকাম করা সম্ভব।
>বীজ থেকে মরিচ গাছের চারা তৈরির ডিজিটাল পদ্ধতি
>পাতা থেকে লেবু গাছের চারা তৈরি পদ্ধতি
সঠিক পরিচর্যার অভাবে অনেকেই আপেল গাছের চারা বড় করতে পারেনা। দেখা যায় বড় হতে হতেই আপেল গাছটি মরে যায়। টিসু পেপার দিয়ে আপেল গাছের চারা তৈরির সঠিক জ্ঞান এবং আধুনিক চাষাবাদ এর সঠিক জ্ঞান নিয়ে খুব সহজেই বাণিজ্যিকভাবে আপেল গাছের চাষ করা সম্ভব।
বাংলাদেশের বর্তমান পেক্ষাপটে আপেল গাছের চারা তৈরি করে কিংবা আপেলের গাছের চাষাবাদ করে খুব সহজে সফল উদ্যোক্তা হওয়া সম্ভব। তাছাড়া যে সকল লোক উদ্ভিদ জগৎ সম্পর্কে অনেক জ্ঞান রয়েছে তারা তাদের আহরিত জ্ঞান আধুনিক চাষাবাদে ব্যবহার করতে পারে।
খুব সহজেই এসকল বিভিন্ন দামী ফলের চারা তৈরি করে নার্সারি তৈরি করতে পারেন। এর ফলে একদিকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন এবং বাংলাদেশের অনেকেই সকল ফল চাষের প্রতি উদ্বুদ্ধ হবে।
বাংলাদেশ আপেলের চাষ সচরাচর বেশি হয়ে গেলে দেশের চাহিদা মেটানোর পর বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। তাছাড়া এই ফল বিশ্বের সকল দেশেই আপেল নামে পরিচিত এবং সকল মানুষের পছন্দের একটি ফল।
আপনি বিনা পরিশ্রমে খুবই কম ইনভেস্টমেন্ট করে অধিক আপেল চারা উৎপাদন করে সেগুলো বিক্রি করতে পারবেন। এর পাশাপাশি আপনি অন্যান্য ফলগুলোর চাড়া তৈরি করে বড় একটি নার্সারি তৈরি করতে পারেন।
টিস্যু পেপার থেকে আপেল গাছের চারা তৈরি প্রক্রিয়া
আপেলের অনেকগুলো প্রজাতি রয়েছে তবে আপনি যেটা পছন্দ করেন প্রথমে সেটা বাছাই করুন। তাজা মিষ্টি সুন্দর আপেল বাছাই করে নিন। একটি আপেল এর ভেতরে চারটি থেকে ৬টি বীজ থাকে।
আপনি তিনটি থেকে চারটি আপেল সংগ্রহ করে সাবধানতা অবলম্বন করে আপেলগুলো কাটুন এবং বীজ গুলো বের করুন। আপেল কাটার সময় খেয়াল রাখবেন বীজ যেনো আঘাতপ্রাপ্ত না হয় কিংবা কেটে না যায়।
বীজগুলো বের করা হয়ে গেলে আপনি পরিষ্কার করে নিতে পারেন। অনেকেই আপেলের বীজ রোপণ করে কিন্তু আপেলের জার্মিনেশন হয়না কিংবা আপেলের বীজ থেকে চারা তৈরি হয়না।
এর প্রধান একটি কারণ হলো আপেলের বীজ এর উপরের অংশ ফেলে না দেওয়ার কারণে এমনটা হয়। আপেলের বীজ এর উপরে একটি ছোট অংশ রয়েছে যা খোসা নামে পরিচিত সেটি উপর থেকে হালকা করে ফেলে দিন।
কেননা এখান দিয়ে অঙ্কুরোদগম হবে যখন খোসাটি থাকবে না তখন অঙ্কুরোদগম খুব সহজেই হবে। তাই আস্তে করে অংশটি ফেলে দিন খুব সাবধানতার সাথে কাজটি করবেন যেন আপেলের বীজের কোনো ক্ষতি না হয়।
টিসু পেপার দিয়ে আপেল গাছের চারা তৈরি প্রক্রিয়া এখন শুরু হবে। প্রথমে একটি পাত্র নিন প্লাস্টিকের পাত্র হলে বেশি ভালো হয়। তারপরে একটি টিস্যু নিয়ে পানিতে ভিজিয়ে পাত্রের ভিতর সুন্দর মত বিছিয়ে দিন।
আপেলের বীজ গুলো এক থেকে দুই ইঞ্চি ফাঁকা রেখে টিস্যুর উপর রাখুন। এরপর টিস্যুটি ভাঁজ করে ফেলুন এবং প্রয়োজন মতো আরও কিছুটা পানি দিন। এরপরে ভাঁজ করার টিস্যু পাত্রের ভিতর রেখে পাত্রের মুখ বন্ধ করে দিন।
অর্থাৎ কোন আলো বাতাস যেন পাত্রের ভিতরে ঢুকতে পারে। এরপর পাত্রটি কোন শুষ্ক স্থানে অর্থাৎ আপনার ঘরের ভিতরে রেখে দিতে পারেন। এভাবে 10 থেকে 15 দিন রেখে দিন তবে এর ভেতরে পাত্রের মুখ খোলার প্রয়োজন নেই।
আপেল গাছের চারা রোপনের মাটি প্রস্তুতকরন
টবে আপেল গাছের চারা লাগানোর নিয়ম
১০ থেকে ১৫ দিন পরে টিস্যু পেপার দিয়ে মুড়িয়ে রাখা আপেলের বীজ গুলো বের করুন। দেখতে পারবেন যে বীজগুলো ফেটে অঙ্কুরোদগম হয়েছে কিংবা জার্মিনেশন হয়েছে। এখন কয়েকটি টব নিন টবের ভেতরে আগের প্রস্তুত করা মাটি দিয়ে ভরে রাখুন।
একটি টবে ৭০ ভাগ মাটি দিবেন এবং বাকি ৩০ শতাংশ জৈব সার মিক্সড করবেন এতে ফলন অনেক ভালো হবে। এরপর পাত্রটির ভিতরে মাটি ভরে ছোট ছোট কয়েকটি গর্ত করুন।
গর্তের ভিতর আপেলের বীজ থেকে বের হওয়া জৈব সার মিক্সট গর্তের ভিতর রেখে উপর দিয়ে হালকা মাটির আস্তরণ দিন। এরপরে পরিমাণমতো পানি দিয়ে আপনি খোলামেলা পরিবেশে রাখতে পারেন।
নিয়মিত আপেলের চারা গুলোর খোঁজখবর রাখুন এবং পরিচর্যা করুন। তাছাড়া প্রতিদিন পরিমাণ মত পানি দিন। একটি বিষয় খেয়াল রাখবেন একটি আপেল গাছ কখনোই স্যাঁতস্যাঁতে মাটি পছন্দ করেনা।
তাই পানি খুব কম দেয়ার চেষ্টা করবেন যতটা সম্ভব মাটিগুলো উষ্ণ রাখার চেষ্টা করবেন। আপেল গাছের টবের মাটি বেশি ভিজে থাকলে আপেল গাছের গোড়া পঁচে যেতে পারে। সব সময় মাটি শুকনো রাখার চেষ্টা করবেন।
একটি টবে দুটি থেকে তিনটি করে আপেল গাছের চারা লাগান। আপেল গাছের চারা কিছুটা বড় হলে যদি এর ভিতর দুই একটি চারা খুব ছোট থাকে তাহলে সেগুলো ফেলে দিন।
কারণ এগুলো হলো রোগাক্রান্ত চারা এগুলো হতে ফল পেতে খুব দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। যেগুলো খুব তাড়াতাড়ি বড় হবে সেগুলো রেখে বাকিগুলো ফেলে দিতে পারেন।
টিসু পেপার দিয়ে আপেল গাছের চারা তৈরি সুবিধা ও অসুবিধা
সুবিধাঃ টিসু পেপার দিয়ে আপেল গাছের চারা তৈরি অনেক সহজ এবং কম পরিশ্রমের একটি আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে খুব কম সময়ে অধিক আপেল গাছের চারা পাওয়া সম্ভব।
তাছাড়া কম খরচে অনেক গুলো ছাড়া একসাথে পাওয়া সম্ভব। এই পদ্ধতিতে চাষ করলে যে কেউ আপেল চাষে সাফল্য বয়ে আনতে পারবে। অনেক বেশি আপেল গাছের চারা তৈরি করতে হলে বীজতলা তৈরি করে নিতে হবে তাহলে আপনার জন্য উপকার হবে।
অসুবিধাঃ টিসু পেপার দিয়ে আপেল গাছের চারা তৈরি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকলে এই পদ্ধতি আপনার জন্য অনেক সেনসিটিভ। কেননা একটু ভুল হলে আপনার পুরো পরিশ্রম বৃথা যেতে পারে।
তাছাড়া এই পদ্ধতিতে আপেল গাছের চারা তৈরি করা হলে ফলন পেতে অনেক সময় লাগতে পারে। যেহেতু একটি চারা ছোট থেকে বড় হতে দীর্ঘ সময় লাগে তাই অবশ্যই খুব ভালো পরিচর্যা করতে হবে তাহলে অনেক কম সময়ে ফলন পেতে পারেন।
উপরোক্ত টিসু পেপার দিয়ে আপেল গাছের চারা তৈরি পদ্ধতি প্রয়োগে আপনি অনেক ভাল ফলাফল পাবেন। আপনার বুঝতে কোনরকম সমস্যা হলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।